ক্ষুদিরাম : আওয়ামী লীগ নেতা ও আওয়ামীপন্থি ব্যবসায়ীদের নিয়ে পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজের নতুন কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠার পর এবার বিতর্কিত এই কমিটি থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন দুই পরিচালক।
গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বিকেলে তারা নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেন দুই ব্যবসায়ী গোলাম রাব্বানী কামনা ও রবিউল ইসলাম রবি। সন্ধ্যায় তারা গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা বলেন, সম্প্রতি অনলাইন নিউজ প্রোর্টালে আমাদের পাবনা চেম্বার অফ কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচালক দেখানো হয়েছে। এই ধরনের সংবাদে আমরা অত্যান্ত বিঘ্নিত। কারণ এই পরিচালক পদে নির্বাচনের জন্য কোনো প্রার্থী হই নাই, কোথাও কোন স্বাক্ষর করিনাই। কিভাবে আমাদের নাম পরিচালক হিসেবে দেয়া হয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। বিধায় পাবনা চেম্বার অফ কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে আমাকে যে পরিচালক দেখানো হয়েছে তা থেকে আমার নাম প্রত্যাহার করে নিলাম ।
দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা আরও বলেন, কোন প্রক্রিয়ায় পাবনা চেম্বার অব কমার্সে নির্বাচন দেখিয়ে আমাদেরকে পরিচালক করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি। পাবনার সর্বস্তরের ব্যবসায়ী সচেতন জনসাধারণের সদয় অবগতির জন্য পুনঃ ব্যক্ত করছি যে, আমাকে এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক দেখানোর কোন প্রক্রিয়ার সাথে আমি যুক্ত নই। দেখানো এই কমিটি থেকে আমার নাম প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।
এবিষয়ে নবগঠিত কমিটির সভাপতি ফোরকান রেজা বিশ্বাস বাদশার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের পরও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে তিনি বলেন,‘আলোচনা-সমালোচনা তো থাকবেই। যতো ভালো কাজই করেন না কেন সমালোচনার অভাব নেই এই দেশে। আমাকে জোর করে (শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের) সভাপতি বানিয়েছিল, কিন্তু আমি কোনো কাজ করিনি। সেই সময়ে অনেক কিছুই করতে হয়েছে। ৫ আগস্টের পর আমরা মুক্তি পেয়েছি আলাদাভাবে।’
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ নেতা ও আওয়ামীপন্থি ব্যবসায়ীদের নিয়ে পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজের নতুন কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। অত্যন্ত গোপনে ও সুকৌশলে এই কমিটির গঠনের পর প্রকাশ্যে এলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজের নবগঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমেই এই কমিটি প্রকাশ্যে আসে। কমিটির প্রথম সভায় আওয়ামী লীগপন্থি ব্যবসায়ীদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনা ঝড় উঠে। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পুর্ণাঙ্গ কমিটির লিস্ট এখনও পাওয়ায় যায়নি। তবে চেম্বার অব কমার্সের অফিসে নতুন তালিকা টাঙানো হয়েছে।
নবগঠিত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে আগের কমিটির সহ-সভাপতি ফোরকান রেজা বিশ্বাস বাদশাকে। তিনি শেখ রাসেল শিশুকিশোর পরিষদের পাবনার সভাপতি। যার আওয়ামী সংশ্লিষ্ট একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সয়লাব হয়েছে। নৌকার ভোট চেয়ে ব্যানার, আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে মিছিলে অংশগ্রহণ, যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে একাধিক ছবি ভাইরাল হয়েছে। সাবেক ডেপুটি স্পিকার টুকুর বেয়ার ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদ লাইজু, আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা খোকা আফজালের ছেলে জাহিদ হোসেন জামিল, ফরিদুল ইসলাম, শামীম হোসেন, তাজউদ্দিন মিলন, কুতুব উদ্দিন সুইটসহ এই কমিটির অনেক সদস্য রয়েছে তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। অনেকেই আওয়ামী প্রভাবে আগের কমিটিরও সদস্য ছিলেন, নবগঠিত কমিটিতেও তারা সদস্য।
এমন বিতর্কিত আওয়ামী পুনর্বাসন কমিটির প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই পাবনার গণতন্ত্রকামী ও বিএনপি-জামায়াতপন্থি ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেই বৃহত্তর আন্দোলনের যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এর আগে পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। সেখানেও আওয়ামীপন্থিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে যাকে সদস্য করা হয়েছে তাকে পাবনার কোনো সাংবাদিক তাকে চেনেনই না। পাবনায় তার কোনো অস্তীত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পাবনা চেম্বার ও ক্রীড়া সংস্থার একাধিক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- পাবনা চেম্বার অব কমার্স এবং পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিয়ন্ত্রক ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক কঠোর আওয়ামীপন্থি ব্যবসায়ী সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী। শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক, পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজের সভাপতি এবং পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নবগঠিত পাবনা চেম্বার অব কমার্স এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধিকাংশ সদস্যই তার অনুসারী।